গণমাধ্যমের উপর হামলার ঘটনা পরিদর্শনে শিক্ষার্থীরা

গণমাধ্যমের উপর হামলার ঘটনা পরিদর্শনে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গণমাধ্যমের উপর যে হামলা হচ্ছে সেই হামলার সঙ্গে শিক্ষার্থীরা জড়িত নয়। এই হামলাগুলো কিছু দুষ্কৃতিকারী নিজেদের স্বার্থরক্ষায় করে আসছে। গণমাধ্যমের উপর এই হামলা রুখে দিতে প্রস্তুত রয়েছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৯ আগস্ট) ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপে হামলার ঘটনা পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন শিক্ষার্থীরা।

হামলার ঘটনার পর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের হামলার স্থান পরিদর্শন করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, বিপ্লবের পরেই একটা প্রতিবিপ্লব হওয়ার আশংকা থাকে। এখন যেহেতু শিক্ষার্থীরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছে সেহেতু কিছু লোক তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসব কাজ করে যাচ্ছে। তারা শিক্ষার্থীদের নামটা বারবার ব্যবহার করে যাচ্ছে।

এটা আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাচ্ছি। আজকেও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপে দেখতে পেলাম। তারা শিক্ষার্থীদের নাম করে যে ভাংচুর করেছে সেটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ ধরনের কাজকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কখনোই প্রমোট করে না।

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অনেক ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। কিন্তু পরে প্রমাণ হয়েছে যে, একটি ধ্বংসযজ্ঞও শিক্ষার্থীদের দ্বারা হয়নি। সুতরাং এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই যুক্ত নয়। আমরা গণমাধ্যমের নিরাপত্তার জন্য আলাদাভাবে কাজ করছি। আমাদের একটি টিম রয়েছে।

আমরা এই টিমকে আরো বড় করবো। গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন আমরা তা করবো।

তারা বলেন, এখানে বিভিন্ন জায়গায় হামলা হয়েছে, গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। পুরো তাণ্ডব চালানো হয়েছে। এটা কোনো শিক্ষার্থীর কাজ হতে পারে বলে আমরা মনে করি না। স্বাধীন হওয়ার পর থেকে একটি কুচুক্রিমহল তাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার জন্য এ ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে আশা করবো তারা যেনো আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান রাখবো, তারা যেনো ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করেন।

পরিদর্শনে এসে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সমন্বয়ক তরী বলেন, ‘যারা এখানে হামলা করেছে তারা কেউ শিক্ষার্থী নয়। আমরা সবাই আন্দোলন করেছি। আমরা কখনোই চাই না আমাদের দেশের ক্ষতি হোক, আমাদের মানুষের ক্ষতি হোক। আমরা মানুষের সঙ্গে আছি। মানুষ আমাদেরকে বিশ্বাস করে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম। সেই গণমাধ্যমের উপর হামলার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা অন্য গণমাধ্যম কর্মীদের বলতে চাই, যদি কেউ শিক্ষার্থীদের পরিচয়ে হামলা করে আপনারা তাদেরকে ধরে আইনের হাতে তুলে দিন। আমরা আমাদের জায়গা থেকে গণমাধ্যমকে সহযোগিতা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আমরা গণমাধ্যম কর্মীদের পাশে আছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের সহযোগিতায় এই দুর্বৃত্তদের রুখে দিবো।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সমন্বয়ক হাসিবুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘যারা এখনো হামলা ও তাণ্ডবের চেষ্টা করছে তারা দুর্বৃত্ত। আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সৃষ্ট যে বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশে এই হামলাকারীরা স্বৈরাচারের দোসর। আমরা এই বিষয় সমন্বয়কদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে এদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট বার্তা যে, আমাদের নতুন বাংলাদেশে এখন আর কোনো দুষ্কৃতিকারীর স্থান হবে না। সাধারণ শিক্ষার্থী যারা আছেন, সবার প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে কোথাও যদি দুষ্কৃতিকারী দেখেন তবে তাদের বেঁধে ফেলে আইনের হাতে তুলে দিন।’

তিনি আরো বলেন, ‘এদের হামলার উদ্দেশ্যে চারদিকে আতঙ্ক ছড়ানো, আমাদের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্কারের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো। এরা বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। এরা রাজাকারের দোসর। আমরা এখন থেকে সর্তক অবস্থানে রয়েছি, তারা যেনো আর এ ধরনের নৈরাজ্য চালাতে না পারে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু দুষ্কৃতিকারী শিক্ষার্থীর পরিচয় দিয়ে এ ধরনের হামলা সংগঠিত করেছে। তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্র সমাজের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এবং ছাত্র সমাজের অর্জনকে বেহাত বিপ্লব করার জন্য দুষ্কৃতিকারীরা কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এসব দুষ্কৃতিকারীদের হুশিয়ারি করে বলতে চাই, আমরা আমাদের রাজপথের সংগ্রাম শেষ করিনি। রাষ্ট্রকে সংস্কার করার আগ পর্যন্ত আমাদের এই সংগ্রাম চলবে। এই সংগ্রামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যদি কেউ চেষ্টা করে তাহলে আমরা তার কালো হাত ভেঙ্গে দিবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৫ আগস্ট থেকে কাজ করে আসছে। গণমাধ্যম গণমানুষের কথা বলবে এই সংস্কৃতি আমরা চালু করবো। সেই জায়গা থেকে আমরা সাধারণ জনগনকে আহ্বান জানাবো, আপনারা গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসুন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় সব সময় স্বোচ্চার ছিলো, সামনেও থাকবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *